সূরা ফীল – বাংলা অর্থ সহ
উচ্চারণ : আলাম তারা কাইফা ফাআ’লা রব্বুকা বিআছহা-বিল ফীল আলাম ইয়াজআ’ল কাইদাহুম ফী-তাদলীল। ওয়া আরসালা আলাইহিম ত্বাইরান আবা-বীল । তারমীহিম বিহিজারাতিম মিন্ সিজ্জীল। ফাজাআ’লাহুম কায়া’ছফিম মা’কূল।
অর্থ : (হে মুহাম্মদ (দঃ)) আপনি কি লক্ষ্য করেন নাই-আপনার প্রভু হস্তীর অধিপতিবৃন্দের সহিত কিরূপ ব্যবহার করিয়াছেন? তিনি কি তাহাদের চক্রান্তকে ব্যর্থ করিয়া দেন নাই? বরং তিনি তাহাদের প্রতি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী পাঠাইয়াছেন; পাখীগুলি তাহাদের প্রতি নিক্ষেপ করিয়াছিল পাথরের টুকরা । এইভাবে তিনি তাহাদিগকে ভক্ষিত তৃণের ন্যায় করিয়া দিলেন ।
শানে-নুজুল : হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর যুগ হইতেই বিভিন্ন দেশের লােকেরা মক্কায় কা’বা শরীফের হজ্জ করিতে আসে। এই উপলক্ষে মক্কার স্থানীয় লােকেরা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। তদুপরি কা’বা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব হিসাবে কুরাইশরা সর্বত্র এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করে, সকলেই তাহাদিগকে শ্রদ্ধার নজরে দেখে । ইয়ামনের খৃষ্টান বাদশাহ্ আব্রাহা ইহাতে ঈর্ষান্বিত হইল। সে ভাবিল, তাহার দেশের রাজধানী ‘ছানয়া’ শহরে মক্কার কা’বা ঘরের চেয়ে অনেক বেশী সুন্দর করিয়া একটি গির্জা তৈরি করিবে, তারপর তাহারা লােকজনকে মক্কায় না যাইয়া ঐ গির্জায় আসিয়া হজ্জ করিবার আহ্বান জানাইবে। ইহাতে তাহার উদ্দেশ্য ছিল- দেশ-দেশান্তর হইতে প্রতিবছর হাজার হাজার লােক তাহার গির্জায় হজ্জ করিবার জন্য আসিলে তাহারা অবশ্যই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট হইতে নিজেদের প্রয়ােজনীয় সামগ্রী ক্রয় করিবে এবং এইভাবে তাহার শহরটি অর্থনৈতিক দিক হইতে উন্নতি লাভ করিবে । দ্বিতীয়তঃ গির্জার পতিষ্ঠাতা হিসাবে সে বিশ্ববাসীর অন্তরে এক বিশেষ স্থান লাভ করিবে ।
সুতরাং সে বিপুল অর্থব্যয়ে ‘ছায়া’ শহরে এক চমৎকার গির্জা তৈরি করিল । অতঃপর সেই গির্জায় যাইয়া, হজ্জ করার জন্য লােকজনকে আহ্বান জানাইল । কিন্তু কোথায় আল্লাহর ঘর কা’বা, আর কোথায় আব্রাহার গির্জা। লােকেরা
তাহার আহ্বানে সাড়া দিল না। তখন সে লােক-লস্কর নিয়ােগ করিয়া মক্কাপসের যাত্রীদের পথিমধ্য হইতে ধরিয়া নিয়া এবং তাহাদিগকে যথেষ্ট খাতির-সমাদর করিয়া তাহার গির্জার দিকে আকৃষ্ট করিতে চাহিল। ইহাতেও বিশেষ ফল হইল না, বরং তাহার কার্যকলাপে মানুষের মনে অসন্তোষ্ট দানা বাঁধিয়া উঠিল। এমতাবস্থায় আরববাসী নওফেল নামক এক ব্যক্তি একদা তাহার গির্জায় মলত্যাগ করিয়া আসিল। ইহাতে আব্রাহার ক্ষোভ, দুঃখ ক্রোধ আরও বাড়িয়া গেল। সে স্থির করিলঃ কা’বা ঘরটিকে ভাঙ্গিয়া তসনস করিয়া দিলেই তাহার উদ্দেশ্য সফল হইয়া যাইবে। কারণ, লােকেরা তখন বাধ্য হইয়াই তাহার গির্জায় হজ্জ করিতে আসিবে ।
এই দুরভিসন্ধি লইয়া সে অবশেষে অসংখ্য সজ্জিত হস্তী ও অগণিত লােক-লস্কর লইয়া কা’বাঘর ধ্বংস অভিযানে বাহির হইল । কিন্তু আল্লাহর ঘরের হেফাজত আল্লাহই করিলেন। আল্লাহর হুকুমে সমুদ্রোপকুল হইতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী বিষাক্ত পাথরের টুকরা মুখে করিয়া আব্রাহার বাহিনীর উপর ঝাপাইয়া পড়িল আর প্রস্তর বর্ষণ করিয়া আব্রাহারসহ তাহার লােক-লস্কর ও হস্তীগুলােকে ধ্বংস করিয়া দিল। ইহা হযরত নবী-করীম (দঃ)-এর জন্মের ২৫ দিন পূর্বের
ঘটনা। সূরায়ে-ফীল’-এ আব্রাহার উক্ত চক্রান্ত ও তাহার সদল বলে ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার ঘটনার প্রতি আলােকপাত করা হইয়াছে।-(তাফসীরে জালালাইন)
Leave a Reply