নামাজের শর্ত
নামাজ পড়া শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হইল নামাজের সময় হওয়া ।
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কোন নামাজ পড়িলে তাহাতে ফরজ আদায় হইবে না। ইহা ছাড়াও নামাজের বাহিরে আরও ছয়টি কাজ করা ফরজ, যাহার কোনও একটি না করিলে নামাজ পড়া শুদ্ধ হইবে না। সুতরাং সেই কাজগুলাে নামাজের পূর্ব শর্ত।
সেইগুলাে হইতেছে –
১। শরীর পাক হওয়া : গােসল করা ফরজ হয়-এইরূপ কোন নাপাকী অবস্থা লইয়া অথবা বিনা ওজুতে নামাজ পড়া দুরুস্ত নাই । ওজু-গােসলের পানি না পাওয়া গেলে কিম্বা পানি ব্যবহার করিতে না পারার মত কোন ওজর থাকিলে তায়াম্মুম করতঃ শরীর পাক করিয়া লইবে।
মনে রাখিবে, যে নাপাকীর দরুণ গােসল ফরজ হয়, উহা ‘হাদাছে আকবার বা বড় নাপাকী আর যে নাপাকী হইতে পাক হওয়ার জন্য ওজু করিতে হয়, উহা ‘হাদাছে আছগার’ বা ছােট নাপাকী । ছােট হউক কিম্বা বড়, কোন রকম নাপাকী লইয়া নামাজ পড়া দুরুস্ত নাই।
২। কাপড় পাক হওয়াঃ যে সমস্ত কাপড় পরিধানে রাখিয়া নামাজ পড়িবে, তাহা অবশ্যই পাক হইতে হইবে। যদি কাহারও কাপড় নাপাক থাকে এবং অন্য কোন পাক কাপড় না পাওয়া যায়, তবে নামাজের পূর্বে উহা ধুইয়া পাক করিয়া লইবে। ধুইবার জন্য পানি না পাওয়া গেলে অথবা অন্য কোন পাক কাপড় সংগ্রহ করা সম্ভব না হইলে অগত্যা ঐ নাপাক কাপড় লইয়াই নামাজ পড়িবে । ইহা শুধু ওজরের কারণেই।
* যদি অবস্থা এমন হয় যে, কাহারও শরীর এবং কাপড় উভয়ই নাপাক, এমতাবস্থায় যে পরিমাণ পানি পাওয়া যায়, তদ্দারা শরীর পাক করিলে কাপড় পাক করিবার মত পানি অবশিষ্ট থাকে না অথবা কাপড় পাক করিলে শরীর পাক করিবার পানি থাকে না, তাহা হইলে ঐ পানি দ্বারা কাপড় পাক করিবে আর ওজু-গােসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করিবে ।-(হেদায়া)
৩। জায়গা পাক হওয়াঃ নাপাক স্থানে কিংবা নাপাক জায়নামাজের উপর নামাজ পড়া দুরুস্ত নাই। জায়গা পাক হওয়ার অর্থ-জায়নামাজ না বিছাইয়া খালি জমিনে নামাজ পড়িলে যে যে স্থানে নামাজী ব্যক্তির পা, হাঁটু, হাত ও কপাল লাগে, সেই সকল স্থান অবশ্যই পাক হইতে হইবে । ঐ সকল স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে নাপাকী থাকিলেও নামাজ দুরুস্ত হইবে । -(তাহ্তাভী)
* নামাজের বিছানা আকারে ছােট হইলে এবং উহার বাহিরের জায়গা নাপাক বা সন্দেহজনক হইলে এবং আশে-পাশে নামাজ পড়িবার মত কোন পাক জায়গা না পাওয়া গেলে বিছানায় দুই পা ও দুই হাঁটু স্থাপন করা যায় এমনভাবে দাঁড়াইবে আর বিছানার বাহিরে সেজদা করিবে । (দোঃ মােখতার)
৪। ছতর ঢাকাঃ অর্থাৎ, পুরুষের নাভি হইতে হাঁটু পর্যন্ত, স্বাধীন স্ত্রীলােকের মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ব্যতীত শরীরের বাকী সমস্ত অঙ্গ এবং দাসীদের নাভি হইতে পা পর্যন্ত এবং পেট ও পিঠ ঢাকিয়া রাখা ফরজ। ইহার ব্যতিক্রম হইলে নামাজ শুদ্ধ হইবে না।
৫। কেবলামুখী হইয়া নামাজ পড়াঃ কা’বা শরীফের দিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়া ফরজ। কা’বা শরীফ আমাদের এতদ্দেশ হইতে পশ্চিম দিকে অবস্থিত। কাজেই আমাদের জন্য পশ্চিম দিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়া ফরজ।
* কোন নতুন জায়গায় যাইয়া দিক ঠিক না থাকিলে এবং জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লওয়ার মত কোন লােকও না পাওয়া গেলে নিজ অন্তরের সহিত পরামর্শ করিবে। নিজের অন্তর যেইদিকে কেবলা বলিয়া সাক্ষ্য দিবে, সেইদিকে মুখ
করিয়া নামাজ পড়িবে । (দোঃ মােখতার)
* নিজের দিক্ ঠিক নাই, জিজ্ঞাসা করিয়া জানিবার মত লােকও পাওয়া গেল না। এই অবস্থায় নিজে কোন এক দিকে কেবলা অনুমান করিয়া নামাজ পড়িয়া লইল। তারপর জানা গেল, যেইদিকে মুখ করিয়া সে নামাজ পড়িয়াছে কেবলা
সেইদিকে নয়, বরং অন্য দিকে। এই অবস্থায় ঐ নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে । (দোঃ মােখতার)
৬। নিয়ত করাঃ কোন্ ওয়াতের নামাজ, কোন প্রকার নামাজ এবং কত রাকয়াত-এই সমস্ত বিষয় মনে মনে স্থির করিয়া লওয়া ফরজ। মনের নিয়তই হইল আসল। তৎসঙ্গে মুখেও নিয়ত উচ্চারণ করা উত্তম। মনে নিয়ত না করিয়া শুধু মুখে নিয়ত করিলে নামাজ শুদ্ধ হইবে না।
কোন ব্যক্তি জোহরের নামাজ পড়িতে মনস্থ করিয়া মুখে যদি আছরের কথা বলিয়া ফেলে অথবা দুই রাকয়াত পড়িতে মনস্থ করিয়া মুখে চারি রাকয়াত বলিয়া ফেলে, তাহা হইলে তাহার মুখের কথা গ্রহণযােগ্য হইবে না, বরং যাহা মনস্থ করিয়াছে, তাহাই গৃহীত হইবে। -(শারহে তানভীর)
============================
নামাজের মধ্যে সাতটি ফরজ কাজ
নিম্নলিখিত সাতটি কাজ নামাজের ভিতর ফরজ। এইগুলিকে ‘নামাজের আরকান’ বলা হয়। কাজগুলাে হইতেছে ।
১। তাকবীরে তাহরীমাঃ অর্থাৎ আল্লাহু আকবার’ বলিয়া নামাজ আরম্ভ করা।
কোন ব্যক্তি মসজিদে আসিয়া দেখিতে পাইল যে, জামায়াতে নামাজ হইতেছে এবং ইমাম রুকুতে চলিয়া গিয়াছেন। এই অবস্থায় ঐ ব্যক্তি তাড়াতাড়ি রুকুতে শামিল হইয়া ঐ হালতে থাকিয়াই তাবীরে তাহরীমা বলিল ইহাতে তাহার নামাজ শুদ্ধ হইবে না। কারণ, সে তাবীরে তাহরীমার সহিত নামাজ আরম্ভ করে নাই। -(দোঃ মােখতার)
২। দাঁড়াইয়া নামাজ পড়াঃ দাঁড়াইয়া নামাজ পড়া নামাজের অন্যতম রুকুন। (তবে রােগ-কাতরতা অন্য কোন ওজরের দরুন দাঁড়াইতে অক্ষম হইলে বসিয়া অথবা যেইভাবে সম্ভব নামাজ আদায় করিবে ।)
৩। কেরাত করাঃ অর্থাৎ সূরায়ে ফাতিহা’ বা আলহাম্দু সূরা পাঠের পর কোরআন শরীফের কিছু আয়াত বা কোন সূরা পড়া ।
৪। রুকু করাঃ অনেককেই দেখা যায়, দাঁড়ান অবস্থা হইতে সামান্য একটু ঝুঁকিয়া হাঁটুতে হাত ছোয়ান মাত্রই অবিলম্বে সেজদায় চলিয়া যায়, যাহা দেখিলে রুকু করা হইতেছে বলিয়া বুঝিবার উপায় থাকে না। এইরূপ কখনও করিবে না। একটি ফরজ কাজ যাহাতে ভালভাবে পালন হয়, তৎপ্রতি সতর্ক থাকিবে ।
৫। সেজদা করাঃ সেজদার বেলায়ও অনেকে মােরগের আহার ঠোকরাইয়া খাওয়ার মত দৃশ্যের সৃষ্টি করে। এইরূপ যাহারা করে, তাহারা একটি ফরজ কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করিতে পারে না বলিয়াই এইরূপ করিয়া থাকে।
৬। শেষ-বৈঠক করাঃ যে কয়েক রাকাত নামাজ পড়িবে, তাহা পড়া হইলে শেষবারের মত বৈঠক করা ফরজ।
৭। নামাজ হইতে বাহির হওয়াঃ (নামাজের মধ্যে করা যায় না সেইরূপ কোন কাজ করিয়া অথবা সালাম ফিরাইয়া) নামাজ হইতে বাহির হওয়া ফরজ।-(হেদায়া)
নামাজের ভিতরের এই যে সাতটি ফরজের কথা উল্লেখ করা হইল উহাদের কোনটি স্বেচ্ছায় বাদ দিলে বা ভুলক্রমে বাদ পড়িলে নামাজ শুদ্ধ হইবে না। পুনরায় সেই নামাজ পড়িতে হইবে।-(হেদায়া)
============================
নামাজের ওয়াজিবসমূহ
নামাজের মধ্যে ফরজ কাজসমূহ ছাড়া আরও এমন কতকগুলাে কাজ করিতে হয়, যাহাতে কোনটি ভুলক্রমে ছুটিয়া গেলে ‘সহু সেজদা’ করিলে নামাজ শুদ্ধ হইয়া যায়। সেই কাজগুলােকে ওয়াজিবাতে নামাজ’ বা নামাজের ওয়াজিব কাজ সমূহ বলা হয়। যথা :
১। কোরআন শরীফের কিছু আয়াত বা সূরা মিলাইবার পূর্বে আল্হামদু সূরা পড়া।
২। ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকয়াতে এবং ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল নামাজসমূহের প্রত্যেক রাকাতে সূরা বা কয়েকটি আয়াত পড়া।
৩। তারতীবের প্রতি দৃষ্টি রাখা; অর্থাৎ আগের ফরজ আগে এবং পরের ফরজ পরে পালন করা।
৪। রুকু এবং সেজদাতে কিছু সময় বিলম্ব করা।
৫। রুকু করা হইলে সেই অবস্থা হইতে সােজা হইয়া দাঁড়ান ।
৬। দুই সেজদার মধ্যবর্তী সময়ে সােজা হইয়া বসা।
৭। তিন বা চারি রাকয়াত বিশিষ্ট নামাজে প্রথম দুই রাকয়াতের পর বৈঠক করা।
৮। বিৎরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়া।
৯। উভয় বৈঠকে তাশাহহুদ’ অর্থাৎ ‘আত্তাহিয়্যাতু… আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’ পর্যন্ত পড়া।
১০। সালাম ফিরান।
১১। ফজর, মাগরিব ও এশার নামাজ জামায়াতের সহিত পড়িলে প্রথম দুই রাকয়াতে ইমামের সশব্দে কেরাত পড়া।
১২। রমজান মাসের তারাবীহ ও বিৎরের নামাজ জামায়াতের সহিত পড়িলে উহাদের প্রত্যেক রাকয়াতে ইমামের সশব্দে কেরাত পড়া।
১৩। জুমা’ এবং দুই ঈদের নামাজে ইমামের সশব্দে কেরাত পড়া।
১৪। দুই ঈদের নামাজের অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা ।
১৫। মুক্তাদীগণের ইমামকে অনুসরণ করা ।
১৬। নামাজের কেরাতে সেজদার আয়াত পাঠ করিলে তেলাওয়াতের সেজদা আদায় করা।
============================
সহু-সেজদার কতিপয় মাসয়ালা
* নামাজের মধ্যে যে সমস্ত কাজ করা ওয়াজিব, উহাদের কোন একটি বা একাধিকটি ভুলক্রমে তরক হইয়া গেলে উহার দরুণ নামাজের যে ত্রুটি দেখা দেয়, তাহার ক্ষতিপুরণের জন্য নামাজের শেষ-বৈঠকে অতিরিক্ত দুইটি সেজদা করিতে হয়। উহাকে ‘সহু-সেজদা’ বলে।
* নামাজের শেষ বৈঠকে ‘আত্তাহিয়্যাতু…..আবদুহু ওয়ারাসূলুহু’ পর্যন্ত পড়িয়া কেবলমাত্র ডান দিকে সালাম ফিরাইয়া অতঃপর আরও দুইটি সেজদা
করিয়া পুনরায় শুরু হইতে আত্তাহিয়্যাতু পড়িবে এবং তৎসঙ্গে দুরূদসহ দোয়া মাছুরা মিলাইবে, তারপর যথারীতি দুই দিকে সালাম ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিবে। এই নিয়মে সহু-সেজদা আদায় করিতে হয়।
* শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু’…আবদুহু ওয়া রাসূলুহ’ পর্যন্ত পড়ার পর যদি সহু- সেজদা করিতে মনে না থাকে এবং সালাম ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিয়া থাকে, তাহা হইলেও যদি সালাম ফিরানাের পর ঐ স্থানেই বসা থাকে এবং শরীর কেবলার দিক হইতে অন্য দিকে না ঘুরিয়া থাকে এবং কোনরূপ বাক্যালাপ না করিয়া থাকে, তবে তখনই সহু-সেজদা করিয়া লইবে। ইহাতেও নামাজ শুদ্ধ হইয়া যাইবে । আর যদি সহু-সেজদার কথা তখনও মনে না পড়িয়া থাকে, তবে নামাজ দোহরাইতে হইবে। (আলমগিরী)
* সুন্নত ও নফল নামাজের যে-কোন রাকয়াতে সূরা মিলাইতে ভুলিয়া গেলে সহু-সেজদা করিতে হইবে । -(হেদায়া)
* ‘আলহামদু সূরা’ পড়িবার পর উহার সহিত কোন্ সূরা বা কোন্ আয়াত মিলাইবে সময় নষ্ট করিয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।
* শেষ-বৈঠকে তাশাহহুদ ও দুরূদ শরীফ পড়ার পর, কত রাকয়াত পড়া হইল-তাহা লইয়া চিন্তায় পড়িয়া তিনবার সুবহানাল্লাহ্ পড়ার পরিমাণ সময় ব্যয় করিল। ইহাতে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(শঃ তানভীর)
* রাকয়াতসমূহ শেষ করিয়া শেষ-বৈঠকে বসিল, কিন্তু তখন আত্তাহিয়্যাতু পড়ার কথা ভুলিয়া অন্য কোন চিন্তায় ঐ পরিমাণ সময় কাটাইল । তাহাতেও সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(দোঃ মােখতার।)
* “আত্তাহিয়্যাতু’ পড়িতে বসিয়া ভুলক্রমে আল্হামদু বা অন্য কিছু পড়িয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(ফতােয়া হিন্দিয়া)
* তিন অথবা চারি রাকয়াত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু’ পড়িতে যাইয়া দুইবার আত্তাহিয়্যাতু পড়িয়া ফেলিলে অথবা তাশাহহুদ শেষে দুরূদ শরীফের “আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন্।” পর্যন্ত পড়িয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে । -(রাঃ মােঃ)
* তিন বা চারি রাকয়াত-বিশিষ্ট নামাজে প্রথম দুই রাকয়াতের পর বসিতে ভুলিয়া তৃতীয় রাকয়াতের জন্য দাঁড়াইতে আরম্ভ করিয়া অর্ধেকের কম দাঁড়াইয়া থাকিলে পুনরায় বসিয়া পড়িবে এবং তাশাহহুদ পড়িবে । ইহার জন্য সহু-সেজদা করিতে হইবে না। কিন্তু অর্ধেকের বেশী দাঁড়াইয়া থাকিলে অর্থাৎ সােজা হইয়া দাঁড়ানাের কাছাকাছি হইয়া থাকিলে তখন পুনরায় না বসিয়া দাঁড়াইয়া যাইবে এবং অবশিষ্ট নামাজ পুরা করিয়া তারপর যথাক্রমে সহু-সেজদা করিবে।
অর্ধেকের বেশী অথবা পুরাপুরি দাঁড়াইবার পর ভুলের কথা স্মরণ হওয়ায় যদি বসিয়া পড়ে, তাহা হইলেও সহু-সেজদা করিতে হইবে। (মাঃ তাঃ)
* তারতীব’ পালনে ভুল হইয়া গেলে অর্থাৎ ভুল বশতঃ আগের ফরজ পরে এবং পরের ফরজ আগে করিয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।-(হেদায়া)
* দুই রুকু’ বা তিন সেজদা করিলে অথবা অন্য কোন কাজ নির্দিষ্ট সীমার কম বা বেশি করিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(দোঃ মােখতার)
* রুকু হইতে দাঁড়াইয়া অথবা দুই সেজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসা অবস্থায় বাজে চিন্তায় দীর্ঘক্ষণ কাটাইলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।-(দোঃ মােখতার)
* নামাজের মধ্যে সূরা-কেরাত পড়িতে পড়িতে মধ্যখানে হঠাৎ তিনবার ছুব হানাল্লাহ্ পড়ার সময় পরিমাণ থামিয়া থাকিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(লাঃ মােখতার)
* যেইখানে সশব্দে সূরা কেরাত পড়িবার হুকুম, সেইখানে নীরবে পড়িলে এবং যেইখানে নীরবে পড়িবার হুমুক, সে খানে সশব্দে পড়িলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।-(দোঃ মােখতার)
* ভুলক্রমে বিৎরের নামাজের দোয়া কুনুত পড়া বাদ পড়িয়া গেলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(দোঃ মােঃ)
* দুই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরগুলাে ভুলক্রমে আদায় না করিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে । তবে ঈদের জামায়াত খুব বড় হইলে এবং সহু-সেজদা করিতে গেলে, উহার অনুসরণ করিতে যাইয়া মুকতাদীরা আরও অন্যান্য ভুল, এমন কি নামাজ নষ্ট হওয়ার মত কোন কাজ করিয়া ফেলিতে পারে বলে আশংকা হইলে সহু-সেজদা করিবে না। এই হুমুক শুধু ‘খুব বড় জামায়াতের জন্য।
* ভুলক্রমে ওয়াজিব তরক হইয়া গেলে সহু-সেজদা দ্বারা সেই ভুল সংশােধন হয়। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াজিব তরক করিলে সহু-সেজদা দ্বারা সংশােধন হয় না। তাহাতে নামাজ নষ্ট হইয়া যায় এবং সেই নামাজ পুনরায় পড়িতে হয়।-(দোঃমােঃ)
============================
নামাজের সুন্নত কাজসমূহ
১। তাকবীরে-তাহরীমা বলার সময়ে পুরুষগণের কানের লতি পর্যন্ত এবং স্ত্রীলােকগণের কাঁধ পর্যন্ত উভয় হাত উঠান।
২। তাকবীরে-তাহরীমার সময়ে উভয় হাতের অঙ্গুলিগুলি বিস্তার না করিয়া স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা এবং নামাজের মধ্যে উভয় পা অঙ্গুলিসহ কেলার দিকে রাখা।
৩। জামায়াতের নামাজে ইমামের জোরে জোরে এবং মুক্তাদীগনের নীরবে তাকবীর বলা।
৪। তাহরীমা বাঁধার পর, রুকুর অবস্থা, রুকু করার পর দাঁড়ানাে অবস্থা সেজদার অবস্থা, দুই সেজদার মধ্যবর্তী বসা অবস্থা এবং বৈঠকের অবস্থা ব্যতীত অন্য সব সময় পুরুষদের নাভির নীচে এবং স্ত্রীলােকদের সীনার উপর বাম হাতের কব্জির উপর ডান হাত বাঁধা অর্থাৎ ডান হাতে বাম হাত ধরিয়া রাখা।
৫। তাকবীরে-তাহরীমার পর ‘ছানা’ অর্থাৎ ‘ছুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা’ দোয়াটি পড়া।
.
৬। ছানার পর নীরবে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়া।
৭। চারি-রাকয়াত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকয়াতে শুধু আল্হামদুলিল্লাহ সূরা পড়া।
৮। আল্হামদু সূরা শেষে আস্তে আস্তে ‘আমীন’ বলা ।
৯। কুরুতে যাওয়ার সময়ে, সেজদায় যাওয়ার সময়ে, সেজদা হইতে উঠার সময়ে তাবীর বলা।
১০। রুকুতে তিনবার ‘ছুবহানা রাবিয়াল আযীম” এবং সেজদায় তিনবার “ছুবহানা রাব্বিয়াল্ আ’লা” বলা।
১১। রুকুর অবস্থায় ডান হাত ডান পায়ের হাঁটুতে এবং বাম হাত বাম পায়ের হাঁটুতে স্থাপন করা।
১২। রুকু হইতে উঠিবার সময়ে ইমামের ‘সামিয়াল্লাহু লিমান্ হামিদাহ” এবং মুক্তাদীগণের “রাব্বানা লাকাল্ হামদ” বলা; আর একাকী নামাজ পড়িলে উভয়টি বলা।
১৩। বৈঠকের অবস্থায় পুরুষদের ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখা ও বাম পায়ের পাতা বিছাইয়া উহাতে ভর দিয়া বসা; আর স্ত্রীলােকগণের উভয় পায়ের পাতা ডান পার্শ্বে ছড়াইয়া দিয়া নিতম্বের বাম অংশের উপর ভর দিয়া বসা।
১৪। বৈঠক অবস্থায় উভয় হাতের অঙ্গুলিগুলাে উরুতে রাখা ।
১৫। শেষ-বৈঠকে দরূদ শরীফ এবং তারপর দোয়া মাছুরা পড়।
১৬। প্রথম সালামে নিজের ডান পাশে এবং দ্বিতীয় সালামে বাম পাশে চেহারা ফিরান।
১৭। ইমাম হইলে প্রথম সালামে ডান পাশের ফেরেশতা ও মুকতাদীগণকে এবং দ্বিতীয় সালামে বাম পাশের ফেরেশতা ও মুকতাদীগণকে সালাম করিতেছে- এরূপ মনে করা, আর মুক্তাদীগণেরও অনুরূপভাবে ইমাম ও ফেরেশতাগণকে সালাম করিতেছে মনে করা।
১৮। দ্বিতীয় সালামে প্রথম সালাম হইতে খানিকটা আস্তে আওয়াজ করা।
১৯। “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বাক্য বলিয়া নামাজ শেষ করা । -(শাঃ তাঃ, দো মােখতার)
Leave a Reply