রমজান মাসের ফজিলত
(ক) আল্লাহ তায়ালা কোরআন-শরীফে বলেন,
রমজান এমন এক মহিমায়ম ও গৌরবমন্ডিত মাস, যে-মাসে আল্লাহ তায়ালার পাক-কালাম কোরআন-মজীদ অবতীর্ণ হইয়াছে।
আসমানী কিতাবসমূহের সর্বশেষ কিতাব, বিশ্ব মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তি সনদ, সর্বযুগের সর্বদেশের
সর্বজাতিক সর্বাঙ্গীণ জীবন-ব্যবস্থার অপরিবর্তনীয় বিধান-গ্রন্থ ‘আল-কোরআন’ রমজান মাসে নাযিল করা হইয়াছে। ইহা রমজান মাসের বিশেষ ফজিলতের এর কথাই প্রমাণ করে।
কুরআন শরীফ ছাড়াও পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সমূহ এবং ছহীফাগুলিও রমজান মাসেই নাজিল করা হইয়াছিল। হযরত ইব্রাহিম(আঃ) রমজানের প্রথম কিম্বা ৩রা তারিখে ‘ছহীফা’ লাভ করেন। হযরত মুসা (আঃ) রমজানের ৬ই তারিখে ‘তওরাত’ কিতাব লাভ করেন। হযরত দাউদ (আঃ) ‘জাবুর’ কিতাব লাভ করেন রমজানের ১৮ম তারিখে এবং হযরত ঈসা (আঃ) ‘ইনজীল’ কিতাব পান রমজানের ১২ম তারিখে। ইহা হইতে বুঝা যায়, রমজান মাসের সহিত আসমানী কিতাবসমূহের এক বিশেষ সম্পর্ক রহিয়াছে।
(খ) রমজান মাসের ফজিলতের দ্বিতীয় কারণ হইতেছে, আল্লাহ তায়ালা সারা পৃথিবীর মুসলমান নর-নারীকে এইমাসে এক বিশেষ এবাদত (রোজা) ফরজ করতঃ অশেষ পূণ্য হাসিল করার এবং আল্লাহর রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম হইতে নাজাত লাভের বিশেষ সুযোগ দান করিয়াছেন।
(গ) এই মাসের রাত্রিসমূহে তারাবীহ নামাজ পড়িয়া বান্দারা আল্লাহ তায়ালার অধিকতর নৈকট্য অর্জন করার সৌভাগ্য লাভ করে, ইহাও এই মাসের ফজিলতের আরেকটি কারণ।
(ঘ) রমজান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হইতেছেঃ এই মাসে যে-ব্যক্তি একটি নফল কাজ করে, সে অন্যান্য মাসে একটি ফরজ কাজ পালনের সমান সাওয়াব লাভ করে, আর যে-ব্যক্তি এই মাসে একটি ফরজ কাজ পালন করে সে অন্যান্য মাসে সত্তরটি ফরজ কাজ পালনের সাওয়াব লাভ করে।
বুঝা গেল, এই মাসে পালন কৃত এবাদতের সাওয়াব অন্যান্য মাসের পালনকৃত এবাদতের চেয়ে সত্তর গুণ এবাদত বেশী।
(ঙ) এই মাসে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ বা শবে-ক্বদর নামে এমন একটি পবিত্র ও বরকতপূর্ণ রাত্রি রহিয়াছে, যে-রাত্রির এবাদত এক হাজার মাসের (৮৩ বৎসর ৪ মাসের) এবাদত অপেক্ষা উত্তম।
(চ) এই মাসে মোমেনদের রেজেক’ বাড়াইয়া দেওয়া হয়।
(ছ) এই মাসে কোনও রোজাদার ব্যক্তিকে ইফতার করাইলে অশেষ পূণ্যের অধিকারী হওয়া যায়।
হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) হইতে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, আঁ-হযরত (দঃ) বলেন-
যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করায়, উহার বরকতে সে তাহার যাবতীয় গুণাহ্ হইতে মাগফেরাত লাভ করে, এবং দোযখ হইতেও আত্নরক্ষা করে। আর রোজাদার ব্যক্তি রোজার প্রতিদানে যে সাওয়াব লাভ করিবে, সেই পরিমাণ সাওয়াব ইফতার করাইবার প্রতিদানে সেও লাভ করিবে। ইহাতে রোজাদারের সাওয়াব কিছুই হ্রাস করা হইবে না। হযরত নবী-করীম (দঃ) এর পাক-জবানে ইফতার করানোর সাওয়াব সম্পর্কীয় এই উক্তি শুনিয়া উপস্থিত ছাহাবীগণ আরজ করিলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ (দঃ)! আমাদের সকলের তো এমন অর্থ সামর্থ নাই যাদ্দারা রোজাদারকে ইফতার করাইতে পারি। তখন হযরত নবী-করীম(দঃ) ফরমাইলেন- একটি খোরমা, এক চুমুক পানি অথবা এক চুমুক দুধ দ্বারায় যে কেহ কোন রোজাদারকে ইফতার করাইবে, সে-ই এই সাওয়াব লাভ করিবে।
আঁ-হযরত (দঃ) আরও বলেন-
যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে সুপেয় পানি কিম্বা দুধ কিম্বা শরবত পান করাইয়া তৃপ্ত করে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন তাহার জন্য নির্ধারিত হাউজে-কাঁউসার হইতে পানি পান করাইবেন, যাহার ফলে বেহেশতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত কখনও সে পিপাসা অনুভব করিবে না।
লেখাটির সূত্রঃ-
মাওলানা মোহাম্মদ আজিজুল হক
সাহেবের লেখা,
মকসুদুল মোমেনিন বা বেহেশতের সম্বল, বইটির প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় খন্ড একত্রে থেকে।
Leave a Reply