নামাজের নিয়তসমূহ
মনে রাখিবেন, দুই রাকয়াত-বিশিষ্ট নামাজ হইলে নিয়ত করিবার সময় ‘রাকয়াতাই’ বলিবে; তিন রাকয়াত বিশিষ্ট নামাজ হইলে ‘ছালাছা রাকায়াতি’ এবং চারি রাকয়াত হইলে আরবা রাকয়াতি’ বলিবে ।
সুন্নত নামাজ হইলে সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি এবং ফরজ নামাজ হইলে “ফারজুয়াহি তায়ালা’ আর ওয়াজিব নামাজ হইলে ‘ওয়াজিবুয়াহি তায়ালা বলিবে৷
কোন ওয়াকতের নামাজ, কোন ধরনের নামাজ-ফরজ, কি ওয়াজিব কি সুন্নত এবং কত রাকয়াত-তাহা মনে মনে স্থির করাই আসল নিয়ত। মনে মনে স্থির করার সাথে সাথে মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা উত্তম। তাহাতে মন-মুখ এক হইয়া নামাজে মশগুল হয়। বাংলা ভাষায়ও নিয়ত করা চলে, তবে আরবীতে নিয়ত করা ‘আফজাল’ বা উত্তম। নিম্নে প্রত্যেক নামাজের নিয়ত আলাদাভাবে বর্ণনা করা হইতেছে।
ফজরের দুই রাকয়াত সুন্নাতের নিয়ত-
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতিল
ফাজুরি, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান, ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি । আল্লাহু আকবার ।
অর্থঃ আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর ওয়াস্তে ফজরের দুই রাকয়াত সুন্নত
নামাজ পড়িবার নিয়ত করিলাম । আল্লাহু আকবার ।
ফজরের দুই রাকআত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতিল ফাজুরি, ফারজুল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি-আল্লাহু আকবার ।
অর্থঃ আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর ওয়াস্তে ফজরের দুই রাকয়াত ফরজ নামাজ পড়িবার নিয়ত করিলাম । আল্লাহু আকবার ।
===========================
জোহরের চারি রাকয়াত সুন্নাতের নিয়ত
উচ্চারণ । নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আৱবায়া বাকয়াতি ছালাতিজ জুহরি, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলাজিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি। আল্লাহু আকবার!
জোহরের চারি রাকয়াত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকয়াতি ছালাতিজ জুহরি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি। আল্লাহু আকবার!
জোহরের দুই রাকয়াত সুন্নতের নিয়ত-
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া ল্লিাহি তাআলা রাকআতাই সালাতি যােহরি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
=========================
আছরের চারি রাকয়াত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রাকআতি সালাতিল আসরি সুন্নাতু রাসূল্লিাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
আছরে চারি রাকয়াত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা আরবাআ রাকআতি সালাতিল আসরি, ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
===========================
মাগরিবের তিন রাকয়াত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা সালাসা রাকয়াতি ছালাতিল মাগবির, ফরজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি। আল্লাহু আকবার!
মাগরিবের দুই রাকয়াত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিল মাগরিব, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি। আল্লাহু আকবার!
========================
এশার চারি রাকয়াত ফরজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকআতি সালাতিল এশা-ই, ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহ আকবার।
এশার দুই রাকয়াত সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তাআ’লা রাকআতি সালাতিল এশা-ই, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতায়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
==============================
তিন রাকয়াত বিৎরের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা সালাসা রাকয়াতি ছালাতিল বিৎরিল, ওয়াজিবি। মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি-আল্লাহু আকবার!
অর্থ। আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর ওয়াস্তে বিৎরের তিন রাকয়াত ওয়াজিব নামাজের নিয়ত করিলাম ।-আল্লাহু আকবার।
বিৎরের দোয়া কুনূত
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাঈ’নুকা ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু আ’লাইকা ওয়া নুসনী আ’লাইকাল খাইরা, ওয়া নাশকুরুকা ওয়ালা নাকফুরুকা ওয়া নাখলাউ’ ওয়া নাতরুকু মাই ইয়াফ জুরুকা, আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকা নুছাল্লী ওয়া নাস জুদু ওয়া ইলাইকা নাসয়া’ ওয়া নাহ ফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আ’যাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমরা তােমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি এবং পাপ ক্ষমা চাহি এবং তােমারই উপর আমরা বিশ্বাস স্তাপন করি এবং তােমারই উপর ভরসা করি এবং আমরা তােমারই প্রশংসা করি এবং আমরা তােমারই কৃতজ্ঞা জ্ঞাপন করি এবং আমরা তােমার অবমাননা করি না, এবং যাহারা তােমায় অমান্য করে, আমরা তাহাদিগকে বর্জন করিয়া থাকি। হে খােদা! আমরা তােমারই এবাদত করি, তােমার সন্তুষ্টির জন্যই নামাজ পড়ি, তােমাকেই সেজদা করি, তােমার দিকেই দৌড়াই, তােমার দুয়ারেই ধন্না দেই, তােমার রহমতেরই আশা রাখি, তােমার আজাবকেই ভয় করি । তােমার আজাব কাফেরদের উপরই পড়িবে ।
=========================
নফলের নিয়ত– জোহরের শেষ দুই রাকয়াত সুন্নতের পর, মাগরিবের দুই রাকয়াত সুন্নতের পর এবং এশার ফরজের পরবর্তী দুই রাকয়াত সুন্নতের পর-বিৎরের পূর্বে অথবা বিৎরের পরে অন্তরঃ দুই-দুই রাকায়াত নফল নামাজ পড়া উচিত। নফল নামাজের দ্বারা ফরজ ওয়াজিব নামাজের ভুল-ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হয়। নফল নামাজ নিষিদ্ধ সময়ে ব্যতীত অন্য যে কোন সময়ে পড়া যায়। নফল নামাজ এক সঙ্গে চারি রাকয়াতও পড়া যায়, তবে দুই-দুই রাকয়াত করিয়া পড়া উত্তম ।
দুই রাকয়াত নফল নামাজের নিয়ত এইরূপে করিবে-
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতিল নাফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি । আল্লাহু আকবার ।
=====================
জুমার নামাজের হুকুম
* জুমার নামাজ পড়া শুদ্ধ হওয়ার জন্য যে-সব শর্ত রহিয়াছে, সে-সব শর্ত যেইখানে পাওয়া যায়, সেইখানে শুক্রবার দিন জুহরের ওয়াতে জুহূরের পরিবর্তে জামায়াতের সহিত দুই রাকয়াত ফরজ নামাজ পড়িতে হয়। তাহা জুমার নামাজ নামে অভিহিত। জুমা’ পড়া যেইখানে ফরজ, সেইখানকার প্রত্যেক বালেগ ও জ্ঞানসম্পন্ন (অর্থাৎ পাগল-মাতাল বা বেহুশ নয়, এইরূপ) পুরুষের উপর জুমা’র নামাজ আদায় করা অন্যান্য ফরজ নামাজেরমতই, ফরজে-আইন।
কোরআন মজীদে আল্লাহু তায়ালা এরশাদ করেন-
অর্থাৎ, “হে মুমীনগণ! যখন জুমার নামাজের জন্য আহ্বান করা হইবে, তখন তােমরা আল্লাহর জিকরের (অর্থাৎ জুমার নামাজ পড়া ও খুতবা শ্রবণ)-এর দিকে ছুটিয়া যাও, আর ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করিয়া দাও।”
* এই আয়াত দ্বারা জুমা’র নামাজ আদায় করা ফরজ প্রমাণিত হইয়াছে; তৎসঙ্গে ইহাও প্রমাণিত হইয়াছে যে, জুমা’র আজান শােনার পরক্ষণেই বেচা-কেনা, লেন-দেন, চাষাবাদ ইত্যাদি সাংসারিক কাজ-কারবার বন্ধ করিয়া অবিলম্বে জুমার নামাজের দিকে যাওয়া ওয়াজিব।
জুমা’ কাহাদের উপর ফরজ
১। বালেগের উপর জুমার নামাজ পড়া ফরজ। না-বারেগের উপর অন্যান্য পাঞ্জেগানা নামাজ যেমন ফরজ নয়, তেমনি জুমা’ও ফরজ নয় ।
২। পুরুষের উপর জুমার নামাজ ফরজ। স্ত্রীলােকের উপর নয়।
৩। মুকীম’ অর্থাৎ যে-ব্যক্তি নিজের স্থায়ী বাসস্থানে বা অন্য কোন স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস করিতেছে, তাহার উপর জুমা’ ফরজ নয় ।
৪। যে-ব্যক্তি শারীরিক দিক হইতে মাজুর নয়, তাহার উপর জুমা’ ফরজ।
অন্ধ, মাতাল, বেহুশ, চলার শক্তিহীন ও রােগে কাতর ব্যক্তি ইত্যাদি মা’জুরের উপর ফরজ নয়।
৫। যে-ব্যক্তি কাহারও ক্রীতদাস নয়, তাহার উপর জুমার নামাজ পড়া ফরজ। পরের খরীদা-গােলামের উপর জুমা’ ফরজ নয় ।
৬। যে-সমস্ত ওজরের কারণে জামায়াতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি রহিয়াছে, সেই সমস্ত ওজরের কোনটি যাহা নাই তাহার উপর জুমা পড়া ফরজ।
যাহাদের উপর জুমার নামাজ ফরজ নয়,
যেমন- নাবালেগ বালক, স্ত্রীলােক, রূগ্ন, পাগল-মাতাল, ক্রীতদাস, মুছাফির ও মাজুর, তাহারাও জুমা’র নামাজ পড়িলে দুরুস্ত হইবে । নাবালেগের উপর নামাজ ফরজ হয় না, তবুও সে জুমা’র নামাজ পড়িলে ছাওয়াবের অধিকারী হইবে । মুছাফিরী হালতে জুমা’র নামাজ ফরজ নয়,
তবুও যে ব্যক্তি জুমার নামাজ পড়িবে, সে জুমা’র ছওয়াব লাভ করিবে এবং তাহার পুনরায় জুহর পড়িতে হইবে না ।
জুমা’র খুতবা সম্বন্ধে মাসয়ালা
* প্রথম আযানের পর মুছল্পীগণ আসিয়া পৌছিলে এবং ‘কাবলাল জুমা সুন্নত, পড়া হইলে, ইমাম মিম্বরে আরােহণ করিয়া বসিবে এবং তাহার সামনে দাঁড়াইয়া মুয়াযযিন আবার আযান দিবে। আযানের পর ইমাম দাঁড়াইয়া খুতবা পাঠ করিবেন।
* খুতবা সম্পৰ্কীয় সুন্নত কাজসমূহ হইতেছে দাঁড়াইয়া খুতবা পাঠ করা; দুইটি খুতবা পাঠকরা; দুই খুতবার মধ্যখানে তিনবার ছুবহানাল্লাহ পড়িতে পারে, এই পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা; খুতবা আরম্ভ করার সময় মনে মনে ‘আউযু বিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া; মিমবরে দাঁড়াইয়া খুতবা পাঠ করা; খুতবার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও হযরত রাসূলুল্লাহর প্রশংসা বর্ণনা করা; আল্লাহর তওহীদ ও নবীজীর রিসালতের সাক্ষ্য দান করা; আরবী ভাষায় খুতবা দান করা; খুতবার ভিতর আঁ-হযরত (দঃ)-এর নামে দুরূদ শরীফ পড়া; দ্বীন ও ঈমান এবং মুসলমানদের আকীদা ও আমল-আখলাক সম্পর্কে উপদেশ দান করা; কোরআন শরীফের কিছু অংশ তেলাওয়াত করা; মুছল্লীদের দিকে মুখ করিয়া দাঁড়াইয়া খুতবা দান করা আর মুছল্লীদের কেবলামুখী বসিয়া খুতবা শ্রবণ করা। (দুঃ মুঃ)
* দ্বিতীয় খুতবায় আঁ-হযরত (দঃ)-এর আহলে বাইত (পরিবারবর্গ), খুলাফায়ে রাশেদীন, আশারায়ে মুবাশশারা (অর্থাৎ, বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশ ব্যক্তি), -এর জন্য দোয়া করা মুস্তাহাব। -(বাঃ বারেক)
* ইমাম খুতবা পাঠের জন্য মিম্বরে আরােহণ করিলে, তখন হইতে খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত মুছল্লীগণের নামাজ পড়া সালামের উত্তর দেওয়া, কোন রকম বাক্যালাপ করা, কোন কিছু পানাহার করা, এইদিক-ঐদিক হাটাহাটি করা ইত্যাদি নিষেধ। তবে কাজা নামাজ অনাদায় থাকিলে-যাহা আদায় না করিলে জুমার নামাজ পড়া শুদ্ধ হয় না, তাহা খুতবা চলাকালীন পড়িয়া লইবে। -(দেঃ মােঃ)
* খুতবা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে কোন ব্যক্তি কাবলাল জুমা’ চারি রাকয়াত সুন্নতে-মুয়াক্কাদা নামাজ পড়িতে না পারিলে ইমাম যখন দ্বিতীয় খুতবা পাঠ করিবেন, তখন ঐ ব্যক্তি তাহা পড়িয়া লইতে পারিবে।-(দুঃ মুঃ)
* খুতবা পাঠ চলাকালে সকল মুছল্লী চুপ হইয়া মনােযােগ সহকারে খুতবা শুনিবে। ইমাম হইতে দূরে থাকার দরুণ খুতবার আওয়াজ শুনিতে না পাইলেও চুপ করিয়া থাকা ওয়াজিব। -(শামী বাঃ রায়েক)
* কোন ব্যক্তি কাবলাল জুমা’ চারি রাকয়াত সুন্নত নামাজের কিছু অংশ পড়িয়া ফেলিয়াছে, এই অবস্থায় খুতবা আরম্ভ হইয়া গেলে তখন সে তাহার অবশিষ্ট নামাজ পূরা করিয়া লইবে । -(দুঃ মুঃ)
* খুতবার মধ্যে হযরত নবী-করীম (দঃ)-এর পবিত্র নাম উচ্চারিত হইলে মনে মনে দুরূদ শরীফ পড়িৰে। -(বাঃ রায়েক)
* দুই খুতবার মধ্যবর্তী সময়ে হাত তুলিয়া দোয়া করা মাকরূহে তাহরীমা। -(রীঃ মােঃ)
* খুতবা শেষ হওয়ার পর বিনা কারণে নামাজ আরম্ভ করিতে বিলম্ব করা মাকরুহ। খুতবার পর নামাজ আরম্ভ করিতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করিয়া ফেলিলে পুনরায় খুতবা পড়িতে হইবে। তবে, নামাজ সংক্রান্ত কোন জরুরী মাসয়ালা শিক্ষা দিলে, সেই কারণে নামাজ আরম্ভ করিতে কিছুক্ষণ বিলম্ব হইলে ক্ষতি নাই। (দোঃ মােঃ)
জুমার নামাজ কত রাকয়াত?
কোন কোন ব্যক্তি জুমা’র নামাজ ২২ রাকয়াত বলিয়া ধারণা করিয়া থাকে।
সেই ২২ রাকয়াতের হিসাব এইভাবে করা হয় –
তাহিয়্যাতুল ওজু-২ রাকয়াত, দুখুলুল মসজিদ-২ রাকয়াত, কাবলাল জুমা’-৪ রাকয়াত, ফরজ-২ রাকয়াত, বা’দাল জুমা’-৪ রাকয়াত, আখিরিজোহর-৪ রাকয়াত, ওয়াক্তস সুন্নত-২ রাকয়াত, নফল-২ রাকয়াত, মােট ২২ রাকয়াত।
* এই ব্যাপারে মাসয়ালা হইতেছে এই যে, ওজু করিলে ওজুর সম্মানার্থে নামাজের মাকরূহ সময় ছাড়া অন্য যেকোন সময় তাহিয়্যাতুল ওজু নামাজ পড়া যায় এবং পড়িলে বিপুল ছাওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। জুমার দিন বা জুমা’র
নামাজের সময় তাহিয়্যাতুল ওজু’ নামাজ পড়িতে হইবে, এইরূপ কোন খাস হুকুম নাই।
“দুখুলুল মসজিদ’ সম্পর্কেও এই একই কথা। যে-কোন দিন যে-কোন সময় (নামাজের মাকরূহ সময় ব্যতীত) মসজিদে প্রবেশ করিলে মসজিদের তা’জীমের তথা আল্লাহর তা’জীমের নিয়তে অন্ততঃ দুই রাকয়াত নফল নামাজ পড়িলে বিপুল নেকী লাভ হয়। জুমা’র সময়ে ‘দুখুলুল মসজিদ’ এর নামাজ পড়িতে হইবে বলিয়া কোন খাস হুকুম নাই ।
যে স্থানে জুমা’ ফরজ হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ রহিয়াছে, সেই স্থানে চারি রাকয়াত আখিরিজ্জোহর পড়া উত্তম বলিয়া ওলামা-কেরামের অনেকে অভিমত দিয়াছেন । কিন্তু বর্তমানে আমাদের এতদ্দেশ্যে কোন অঞ্চলে জুমা’ ফরজ হওয়া সম্পর্কে সন্দেহের কোনই অবকাশ নাই; সুতরাং আমাদের আখিরিজ্জোহর পড়ার কোনই যৌক্তিকতা নাই।
‘ওয়াকতু সসুন্নত’-ইহা সুন্নতে-জায়েদা-যাহা পালন করিলে ছাওয়াব হয়, না করিলে কোন গুণাহ হয় না। অন্যান্য দিন জুহূরের ফরজের পর যে দুই রাকয়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়া হয়, উহার স্থলে এই দুই রাকয়াত ওয়াক্কুস সুন্নত পড়া হইয়া থাকে তাহা হইলে এই নামাজ পড়া উত্তম।
আর, নফল নামাজ ত নামাজের মাকরূহ সময় ব্যতীত দিবা-রাত্রির অন্য যে-কোন সময়ে পড়া যায়; বরং নফল এবাদত যত বেশী করিবে, আল্লাহর নৈকট্য ততবেশী লাভ হইবে ।
মােটকথা, ফরজকে ফরজ, ওয়াজিবকে ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে জায়েদাকে সুন্নতে জায়েদা এবং নফলকে নফলই মনে করিবে। নফল বা সুন্নতে জায়দাকে সুন্নতে-মুয়াক্কাদা অথবা ফরজ ওয়াজিব মনে করা অন্যায়। সুতরাং জুমার নামাজ কত রাকয়াত-তাহা হিসাব করিতে কোন নামাজ কোন পর্যায়ের, তাহার সঠিক ধারণা থাকা উচিত। এই প্রসঙ্গে এইকথা মনে রাখা প্রয়ােজন যে, জুমার দিনের ফজিলত অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশী । অতএব এই দিনে নফল এবাদত যত বেশী সম্ভব করিবার চেষ্টা করিবে।
জুমার নামাজসমূহের নিয়ত
তাহিয়্যাতুল ওজু’ এবং ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ বা ‘দুখুলুল মসজিদ’ এর নিয়ত নফল নামাজসমূহের অধ্যায় বর্ণিত হইয়াছে। নফল নামাজের নিয়ত
কিরূপে করিতে হয়, তাহাও ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
কাবলাল জুমা’র নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকআতি ছালাতি কাবলিল জুমুয়াতি; সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থঃ আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর ওয়াস্তে চারি রাকয়াত কাবলাল জুমা’সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করিলাম । আল্লাহু আকবার ।
জুমা’র ফরজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসকিতা আন্ জিম্মাতী ফারদুজ্জহরি, বি-আদায়ি
রাকয়াতাই ছালাতিল জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়া’লা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা
জিহাতিল, কা’বাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার ।
অর্থঃ আমার উপর জুহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রহিয়াছে আমি কেবলামুখী হইয়া, জুমা’র দুই রাকয়াত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তাহা পালনের নিয়ত করিলাম। (মুতাদি হইলে নিয়তের সময় ‘ইকতাদাইতু
বিহা-যাল ইমাম’ বলিবে ।)
বা’দাল জুমা’র নিয়ত– ফরজের পূর্ববর্তী চারি রাকয়াতের মতই ‘বাদাল জুমা’ চারি রাকয়াতের নিয়ত করিবে; কেবল ‘কাবলাল জুমা’ কথাটির স্থলে বাদাল জুমা’ বলিতে হইবে ।
আখেরিজ্জোহরের নিয়ত ও ইহার নিয়তও উপরি উক্ত চারি রাকয়াতের নিয়তের মতই, শুধু নামাজের নামের ক্ষেত্রে আখিরিজ্জোহর’ বলিতে হইবে।
ওয়াকতুস সুন্নতের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতি ওয়াতিস্ সুন্নাতি; মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থঃ আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর ওয়াস্তে দুই রাকয়াত ওয়াকতুস সুন্নাতের নিয়ত করিলাম।-আল্লাহ আবার ।
নফলের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতিন্নাফলি; মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
অর্থঃ আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর ওয়াস্তে দুই রাকাত নফল নামাজ পরিবার নিয়ত করিলাম ।
নামাজের কতিপয় মুখস্থ বিষয় | জেনেনিন নামাজের মুখস্থ বিষয় সমূহ- হালিশহর নিউজ
মােনাজাত – প্রত্যেক ফরয নামায শেষে
দোয়া মাসূরা- নামাজে দুরূদ শরীফের পর দোয়া মাসূরা’ পড়িতে হয়।
দুরূদ শরীফ- নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর এই দুরূদ শরীফ পড়িতে হয়- দুরুদে ইব্রাহীম
নামাজের শেষে – তাশাহহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু
সেজদায় যাইয়া এই তাসবীহ পড়িতে হয়-
নামাজ এ রুকু হইতে দাঁড়াইয়াঃ সেজদায় যাওয়ার পূর্বে যে দোয়া পড়িতে হয়-
রুকুর তাসবীহ, রুকুতে যাইয়া এই তাসবীহ পড়িতে হয়-
নামাযে যে ছানা পড়তে হয় | বাংলা অর্থ সহ ছানা
নামাজের বিছানায় বা জায়নামাজে দাঁড়াইয়া যে দোয়া পড়িতে হয়
গােসলের কয়েকটি মাসয়ালা | জেনেনিন গােসলের মাসয়ালা সমূহ- হালিশহর নিউজ
গােসল করিবার নিয়ম কি? জেনেনিন গােসলের নিয়ম সমূহ- হালিশহর নিউজ
গােসলে মুস্তাহাব কয়টি ও কি কি? জেনেনিন গােসলের মুস্তাহাব সমূহ- হালিশহর নিউজ
গােসলে সুন্নত কয়টি ও কি কি? জেনেনিন গােসলের সুন্নত সমূহ- হালিশহর নিউজ
গােসলে ফরজ কয়টি ও কি কি? জেনেনিন গােসলের ফরজ সমূহ- হালিশহর নিউজ
মুস্তাহাব গােসল কি? | কেনো মুস্তাহাব গােসল করতে হবে? জেনেনিন-
সুন্নত গােসল কি? | কেনো সুন্নত গােসল করতে হবে? জেনেনিন- হালিশহর নিউজ
ওয়াজেব গােসল কি? | কেনো ওয়াজেব গােসল করতে হবে? জেনেনিন- হালিশহর নিউজ
গােসল চারি প্রকার – হালিশহর নিউজ
ফরজ গােসল কি? | কেনো ফরজ গোসল করতে হবে? জেনেনিন- হালিশহর নিউজ
ওযুর গুরুত্ব ও ওজুর ফজিলত | হালিশহর নিউজ
ওজুতে সুন্নত্ কি কি? জেনেনিন ওযুর সুন্নাত সমূহ | হালিশহর নিউজ
ওজুতে মাকরুহ্ কি কি? ওযুর মাকরুহ্ – হালিশহর নিউজ
ওজু করিবার নিয়ম | ওযু করার নিয়ম জেনেনিন- হালিশহর নিউজ
ওজুতে মুস্তাহাব কি কি? জেনেনিন ওযুর মুস্তাহাব- হালিশহর নিউজ
কি কি কারণে ওজু ভঙ্গ হয়? ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ- হালিশহর নিউজ
Leave a Reply