শাবান মাসের ফজিলত
এই মাসের ১৫ তারিখের রাতে শবে বরাত।
ইহা একটি মােবারক রাত।
হুজুর (দঃ) ফরমাইয়াছেন- এইমাসের ১৫ই তারিখ রাত্রে কোন লােক যদি এবাদত করে তবে আল্লাহ তায়ালা তাহার উপর দোযখের আগুন হারমা করিয়া দেন।
অন্য আর এক হাদিসে আছে হুজুর পাক (দঃ) ফরমাইয়াছেন- শাবান মাসের ১৫ই তারিখের রাত্রে এবাদতের নিয়তে যে ব্যক্তি গােসল করিবে প্রতি ফোটা।
পানির বদলে তাহার আমল নামায় সাত শত রাকআত নফল নামাজের ছওয়াব লেখা হইবে।
শবে বরাতের নামায
এই নামায শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে পড়িতে হয়।
এশার নামাযের পর হইতে সােবহে কাযেব পর্যন্ত এই নামাযের সময়। নামায, কোরআন তিলাওয়াত, যিকর ও মােরাকাবা, দো’আ-দুরূদ, ইস্তিগফার ইত্যাদি, নফল ইবাদতে সারা রাত্রি জাগরণ থাকিলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায় এবং সমস্ত গুনাহ মাফ হয়।
দুই রাকআত করিয়া এই নামায পড়িতে হয়।
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই ছালাতিল লাইলাতিল বারাআতি মােতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ
শারীফাতে আল্লাহু আকবার।
শবে বরাতের নামায পড়ার নিয়ম
এই নামায এশার নামাযের পর এবং বিতর নামাযের আগে পড়িতে হয়।
(১) সুলতানুল আউলিয়া হযরত হাফেয মনিরুদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি,
নিম্ন বর্ণিত নিয়মে এই নামায শিক্ষা দিয়াছেন।
প্রথমে দুই রাকআত নামাযের প্রথম রাকআতে ছানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ এবং সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস দুইশত বার এবং দ্বিতীয় রাকআতে একশতবার পড়িবে।
তারপর দ্বিতীয় দুই রাকআতের প্রথম রাকআতে ছানা, আউযুবিল্লাহ, বিস্মিল্লাহ এবং সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস একশত বার এবং দ্বিতীয় রাকআতেও একশত বার পড়িয়া নামায শেষ করিবে।
অর্থাৎ মােট চার রাকআত
নামাযে সূরা ইখলাস পাঁচশত বার পড়িতে হয়।
(২) পবিত্র হাদীস শরীফ মতে, এই রাত্রিতে যে ব্যক্তি চার রাকআত নামায পড়ে এবং প্রথম রাকআতে আউযুবিল্লাহর পর সূরা ইখলাস পঞ্চাশ বার এবং দ্বিতীয় রাকআতে পঞ্চাশ বার পড়ে এবং এই নিয়মে বাকী দুই রাকআত নামাজ
পড়ে অর্থাৎ প্রতি রাকআতে পঞ্চাশ বার করিয়া চার রাকআতে মােট দুইশত বার সূরা ইখলাস পড়ে এবং তারপর দিন রােযা রাখে, তাহলে পঞ্চাশ বৎসরের গুনাহ মাপ হইবে।
(৩) এই রাত্রিতে আরও দুই রাকআত নামায পড়িবে। প্রত্যেক রাকআতে আয়াতুল কুরসী একবার এবং সূরা ইখলাস পনের বার পড়িবে। সালামের পর একশত বার দরুদ শরীফ পড়িবে। এই নামায পড়িলে সমস্ত গুনাহ মাফ হইবে,
রিযিকে ফরাগত হইবে এবং নানা প্রকারের পেরেশানী হইতে নাযাত পাইবে।
(৪) এই রাত্রিতে দুই রাকআত করিয়া চৌদ্দ রাকআত নামায যে কোন সূরা
দিয়া পড়িবে। নামাযের পর সূরা ফাতিহা চৌদ্দ বার, সূরা ইখলাস চৌদ্দ বার,
সূরা ফালাক্ চৌদ্দ বার, সূরা নাস চৌদ্দ বার, আয়াতুল কুরসী একবার এবং
নিচের আয়াত দুইটি একবার পড়িবে।
উচ্চারণ: লাক্বাদ জা-আকুম রাসূলুম্ মিন্ আনফুসিকুম আযীযুন আলাইহি মা আনিত্তুম্ হারীসুন্ ‘আলাইকুম্ বিলমু’মিনীনা রাউফুর রাহীম। ফা-ইন তাওয়াল্লাও
ফাক্কুল হাসবিয়াল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কা ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আ’যীম।
অর্থঃ “নিশ্চয় তােমাদের নিকট তােমাদের নিজেদের মধ্য হইতে একজন রাসূল আগমন করিয়াছিলেন।
তােমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁহার নিকট কষ্টদায়ক। তিনি তােমাদের কল্যাণের প্রতি অত্যন্ত আগ্রহশীল, মুমিনদের প্রতি তিনি বড়ই স্নেহশীল দয়াবান। অতপর যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয়, তাহা হইলে (হে রাসূল) আপনি বলিয়া দিন। আল্লাহ্ তা’আলাই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই। আমি তাঁহারই উপর ভরসা রাখি এবং তিনি সুবিশাল আরশের মালিক।” তারপর যে দোআ করিবে, কবুল হইবে ।
এই নামায পড়িলে বিশটি হজ্বের সওয়াব, বিশ বৎসর একাধারে ইবাদতের
সওয়াব এবং তার পরের দিন রােযা রাখিলে অগ্র-পশ্চাৎ দুই বৎসর রােযা রাখার সওয়াব পাইবে।
হযরত আলী (রাঃ) এই নামাযের কথা বর্ণনা করিয়াছেন এবং তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই নামায পড়িতে দেখিয়াছেন।
এই রাত্রিতে তিনবার সূরা ইয়াসীন-পড়িলে আয়ু বৃদ্ধি হইবে, ধনবান হইবে, এবং আসমান ও জমিনের বালা-মুসীবত হইতে রক্ষা পাইবে।
এই রাত্রে ছেলে-মেয়ে সকলে মিলিয়া বেশী করিয়া খাওয়া দাওয়া করিলে রােজগারে বরকত ও রিযিক বৃদ্ধি হইবে।
পবিত্র হাদীস শরীফে আছে শাবানের চৌদ্দ তারিখ সূর্যাস্ত যাইবার সময় নিচের দো’আ চল্লিশ বার পড়িলে চল্লিশ বৎসরের সগীরা গুনাহ মাপ হইয়া যাইবে।
উচ্চারণঃ লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্।
অর্থঃ “আল্লাহ্ তায়ালার প্রদত্ত সাহায্য ছাড়া পাপ হইতে বাঁচিবার এবং সৎকাজ করিবার কাহারও কোন উপায় ও শক্তি নাই।”
লেখার সূত্রঃ
মোকছুদুল মাে’মিনীন
বা
বেহেশতের সম্বল
১ম, ২য় ও ৩য় খণ্ড একত্রে
লিখেছেনঃ
মাওলানা মােহাম্মদ আজিজুল হক
পরিবেশনায়ঃ
সােলেমানীয়া বুক হাউস
বায়তুল মােকাররম, বাংলাবাজার, ঢাকা
Leave a Reply