সহু-সেজদার কতিপয় মাসয়ালা
* নামাজের মধ্যে যে সমস্ত কাজ করা ওয়াজিব, উহাদের কোন একটি বা একাধিকটি ভুলক্রমে তরক হইয়া গেলে উহার দরুণ নামাজের যে ত্রুটি দেখা দেয়, তাহার ক্ষতিপুরণের জন্য নামাজের শেষ-বৈঠকে অতিরিক্ত দুইটি সেজদা করিতে হয়। উহাকে ‘সহু-সেজদা’ বলে।
* নামাজের শেষ বৈঠকে ‘আত্তাহিয়্যাতু…..আবদুহু ওয়ারাসূলুহু’ পর্যন্ত পড়িয়া কেবলমাত্র ডান দিকে সালাম ফিরাইয়া অতঃপর আরও দুইটি সেজদা করিয়া পুনরায় শুরু হইতে আত্তাহিয়্যাতু পড়িবে এবং তৎসঙ্গে দুরূদসহ দোয়া মাছুরা মিলাইবে, তারপর যথারীতি দুই দিকে সালাম ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিবে। এই নিয়মে সহু-সেজদা আদায় করিতে হয়।
* শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু’…আবদুহু ওয়া রাসূলুহ’ পর্যন্ত পড়ার পর যদি সহু- সেজদা করিতে মনে না থাকে এবং সালাম ফিরাইয়া নামাজ শেষ করিয়া থাকে, তাহা হইলেও যদি সালাম ফিরানাের পর ঐ স্থানেই বসা থাকে এবং শরীর কেবলার দিক হইতে অন্য দিকে না ঘুরিয়া থাকে এবং কোনরূপ বাক্যালাপ না করিয়া থাকে, তবে তখনই সহু-সেজদা করিয়া লইবে। ইহাতেও নামাজ শুদ্ধ হইয়া যাইবে । আর যদি সহু-সেজদার কথা তখনও মনে না পড়িয়া থাকে, তবে নামাজ দোহরাইতে হইবে। (আলমগিরী)
* সুন্নত ও নফল নামাজের যে-কোন রাকয়াতে সূরা মিলাইতে ভুলিয়া গেলে সহু-সেজদা করিতে হইবে । -(হেদায়া)
* ‘আলহামদু সূরা’ পড়িবার পর উহার সহিত কোন্ সূরা বা কোন্ আয়াত মিলাইবে সময় নষ্ট করিয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।
* শেষ-বৈঠকে তাশাহহুদ ও দুরূদ শরীফ পড়ার পর, কত রাকয়াত পড়া হইল-তাহা লইয়া চিন্তায় পড়িয়া তিনবার সুবহানাল্লাহ্ পড়ার পরিমাণ সময় ব্যয় করিল। ইহাতে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(শঃ তানভীর)
* রাকয়াতসমূহ শেষ করিয়া শেষ-বৈঠকে বসিল, কিন্তু তখন আত্তাহিয়্যাতু পড়ার কথা ভুলিয়া অন্য কোন চিন্তায় ঐ পরিমাণ সময় কাটাইল । তাহাতেও সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(দোঃ মােখতার।)
* “আত্তাহিয়্যাতু’ পড়িতে বসিয়া ভুলক্রমে আল্হামদু বা অন্য কিছু পড়িয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(ফতােয়া হিন্দিয়া)
* তিন অথবা চারি রাকয়াত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু’ পড়িতে যাইয়া দুইবার আত্তাহিয়্যাতু পড়িয়া ফেলিলে অথবা তাশাহহুদ শেষে দুরূদ শরীফের “আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিন্।” পর্যন্ত পড়িয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে । -(রাঃ মােঃ)
* তিন বা চারি রাকয়াত-বিশিষ্ট নামাজে প্রথম দুই রাকয়াতের পর বসিতে ভুলিয়া তৃতীয় রাকয়াতের জন্য দাঁড়াইতে আরম্ভ করিয়া অর্ধেকের কম দাঁড়াইয়া থাকিলে পুনরায় বসিয়া পড়িবে এবং তাশাহহুদ পড়িবে । ইহার জন্য সহু-সেজদা করিতে হইবে না। কিন্তু অর্ধেকের বেশী দাঁড়াইয়া থাকিলে অর্থাৎ সােজা হইয়া দাঁড়ানাের কাছাকাছি হইয়া থাকিলে তখন পুনরায় না বসিয়া দাঁড়াইয়া যাইবে এবং অবশিষ্ট নামাজ পুরা করিয়া তারপর যথাক্রমে সহু-সেজদা করিবে।
অর্ধেকের বেশী অথবা পুরাপুরি দাঁড়াইবার পর ভুলের কথা স্মরণ হওয়ায় যদি বসিয়া পড়ে, তাহা হইলেও সহু-সেজদা করিতে হইবে। (মাঃ তাঃ)
* তারতীব’ পালনে ভুল হইয়া গেলে অর্থাৎ ভুল বশতঃ আগের ফরজ পরে এবং পরের ফরজ আগে করিয়া ফেলিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।-(হেদায়া)
* দুই রুকু’ বা তিন সেজদা করিলে অথবা অন্য কোন কাজ নির্দিষ্ট সীমার কম বা বেশি করিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(দোঃ মােখতার)
* রুকু হইতে দাঁড়াইয়া অথবা দুই সেজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসা অবস্থায় বাজে চিন্তায় দীর্ঘক্ষণ কাটাইলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।-(দোঃ মােখতার)
* নামাজের মধ্যে সূরা-কেরাত পড়িতে পড়িতে মধ্যখানে হঠাৎ তিনবার ছুব হানাল্লাহ্ পড়ার সময় পরিমাণ থামিয়া থাকিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(লাঃ মােখতার)
* যেইখানে সশব্দে সূরা কেরাত পড়িবার হুকুম, সেইখানে নীরবে পড়িলে এবং যেইখানে নীরবে পড়িবার হুমুক, সে খানে সশব্দে পড়িলে সহু-সেজদা করিতে হইবে।-(দোঃ মােখতার)
* ভুলক্রমে বিৎরের নামাজের দোয়া কুনুত পড়া বাদ পড়িয়া গেলে সহু-সেজদা করিতে হইবে। -(দোঃ মােঃ)
* দুই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরগুলাে ভুলক্রমে আদায় না করিলে সহু-সেজদা করিতে হইবে । তবে ঈদের জামায়াত খুব বড় হইলে এবং সহু-সেজদা করিতে গেলে, উহার অনুসরণ করিতে যাইয়া মুকতাদীরা আরও অন্যান্য ভুল, এমন কি নামাজ নষ্ট হওয়ার মত কোন কাজ করিয়া ফেলিতে পারে বলে আশংকা হইলে সহু-সেজদা করিবে না। এই হুমুক শুধু ‘খুব বড় জামায়াতের জন্য।
* ভুলক্রমে ওয়াজিব তরক হইয়া গেলে সহু-সেজদা দ্বারা সেই ভুল সংশােধন হয়। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়াজিব তরক করিলে সহু-সেজদা দ্বারা সংশােধন হয় না। তাহাতে নামাজ নষ্ট হইয়া যায় এবং সেই নামাজ পুনরায় পড়িতে হয়।-(দোঃ মােঃ)
Leave a Reply