নামাজের শর্ত
নামাজ পড়া শুদ্ধ হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হইল নামাজের সময় হওয়া ।
নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কোন নামাজ পড়িলে তাহাতে ফরজ আদায় হইবে না। ইহা ছাড়াও নামাজের বাহিরে আরও ছয়টি কাজ করা ফরজ, যাহার কোনও একটি না করিলে নামাজ পড়া শুদ্ধ হইবে না। সুতরাং সেই কাজগুলাে নামাজের পূর্ব শর্ত।
সেইগুলাে হইতেছে –
১। শরীর পাক হওয়া : গােসল করা ফরজ হয়-এইরূপ কোন নাপাকী অবস্থা লইয়া অথবা বিনা ওজুতে নামাজ পড়া দুরুস্ত নাই । ওজু-গােসলের পানি না পাওয়া গেলে কিম্বা পানি ব্যবহার করিতে না পারার মত কোন ওজর থাকিলে তায়াম্মুম করতঃ শরীর পাক করিয়া লইবে।
মনে রাখিবে, যে নাপাকীর দরুণ গােসল ফরজ হয়, উহা ‘হাদাছে আকবার বা বড় নাপাকী আর যে নাপাকী হইতে পাক হওয়ার জন্য ওজু করিতে হয়, উহা ‘হাদাছে আছগার’ বা ছােট নাপাকী । ছােট হউক কিম্বা বড়, কোন রকম নাপাকী লইয়া নামাজ পড়া দুরুস্ত নাই।
২। কাপড় পাক হওয়াঃ যে সমস্ত কাপড় পরিধানে রাখিয়া নামাজ পড়িবে, তাহা অবশ্যই পাক হইতে হইবে। যদি কাহারও কাপড় নাপাক থাকে এবং অন্য কোন পাক কাপড় না পাওয়া যায়, তবে নামাজের পূর্বে উহা ধুইয়া পাক করিয়া লইবে। ধুইবার জন্য পানি না পাওয়া গেলে অথবা অন্য কোন পাক কাপড় সংগ্রহ করা সম্ভব না হইলে অগত্যা ঐ নাপাক কাপড় লইয়াই নামাজ পড়িবে । ইহা শুধু ওজরের কারণেই।
* যদি অবস্থা এমন হয় যে, কাহারও শরীর এবং কাপড় উভয়ই নাপাক, এমতাবস্থায় যে পরিমাণ পানি পাওয়া যায়, তদ্দারা শরীর পাক করিলে কাপড় পাক করিবার মত পানি অবশিষ্ট থাকে না অথবা কাপড় পাক করিলে শরীর পাক করিবার পানি থাকে না, তাহা হইলে ঐ পানি দ্বারা কাপড় পাক করিবে আর ওজু-গােসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করিবে ।-(হেদায়া)
৩। জায়গা পাক হওয়াঃ নাপাক স্থানে কিংবা নাপাক জায়নামাজের উপর নামাজ পড়া দুরুস্ত নাই। জায়গা পাক হওয়ার অর্থ-জায়নামাজ না বিছাইয়া খালি জমিনে নামাজ পড়িলে যে যে স্থানে নামাজী ব্যক্তির পা, হাঁটু, হাত ও কপাল লাগে, সেই সকল স্থান অবশ্যই পাক হইতে হইবে । ঐ সকল স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থানে নাপাকী থাকিলেও নামাজ দুরুস্ত হইবে । -(তাহ্তাভী)
* নামাজের বিছানা আকারে ছােট হইলে এবং উহার বাহিরের জায়গা নাপাক বা সন্দেহজনক হইলে এবং আশে-পাশে নামাজ পড়িবার মত কোন পাক জায়গা না পাওয়া গেলে বিছানায় দুই পা ও দুই হাঁটু স্থাপন করা যায় এমনভাবে দাঁড়াইবে আর বিছানার বাহিরে সেজদা করিবে । (দোঃ মােখতার)
৪। ছতর ঢাকাঃ অর্থাৎ, পুরুষের নাভি হইতে হাঁটু পর্যন্ত, স্বাধীন স্ত্রীলােকের মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ব্যতীত শরীরের বাকী সমস্ত অঙ্গ এবং দাসীদের নাভি হইতে পা পর্যন্ত এবং পেট ও পিঠ ঢাকিয়া রাখা ফরজ। ইহার ব্যতিক্রম হইলে নামাজ শুদ্ধ হইবে না।
৫। কেবলামুখী হইয়া নামাজ পড়াঃ কা’বা শরীফের দিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়া ফরজ। কা’বা শরীফ আমাদের এতদ্দেশ হইতে পশ্চিম দিকে অবস্থিত। কাজেই আমাদের জন্য পশ্চিম দিকে মুখ করিয়া নামাজ পড়া ফরজ।
* কোন নতুন জায়গায় যাইয়া দিক ঠিক না থাকিলে এবং জিজ্ঞাসা করিয়া জানিয়া লওয়ার মত কোন লােকও না পাওয়া গেলে নিজ অন্তরের সহিত পরামর্শ করিবে। নিজের অন্তর যেইদিকে কেবলা বলিয়া সাক্ষ্য দিবে, সেইদিকে মুখ
করিয়া নামাজ পড়িবে । (দোঃ মােখতার)
* নিজের দিক্ ঠিক নাই, জিজ্ঞাসা করিয়া জানিবার মত লােকও পাওয়া গেল না। এই অবস্থায় নিজে কোন এক দিকে কেবলা অনুমান করিয়া নামাজ পড়িয়া লইল। তারপর জানা গেল, যেইদিকে মুখ করিয়া সে নামাজ পড়িয়াছে কেবলা
সেইদিকে নয়, বরং অন্য দিকে। এই অবস্থায় ঐ নামাজ পুনরায় পড়িতে হইবে । (দোঃ মােখতার)
৬। নিয়ত করাঃ কোন্ ওয়াতের নামাজ, কোন প্রকার নামাজ এবং কত রাকয়াত-এই সমস্ত বিষয় মনে মনে স্থির করিয়া লওয়া ফরজ। মনের নিয়তই হইল আসল। তৎসঙ্গে মুখেও নিয়ত উচ্চারণ করা উত্তম। মনে নিয়ত না করিয়া শুধু মুখে নিয়ত করিলে নামাজ শুদ্ধ হইবে না।
কোন ব্যক্তি জোহরের নামাজ পড়িতে মনস্থ করিয়া মুখে যদি আছরের কথা বলিয়া ফেলে অথবা দুই রাকয়াত পড়িতে মনস্থ করিয়া মুখে চারি রাকয়াত বলিয়া ফেলে, তাহা হইলে তাহার মুখের কথা গ্রহণযােগ্য হইবে না, বরং যাহা মনস্থ করিয়াছে, তাহাই গৃহীত হইবে। -(শারহে তানভীর)
Leave a Reply