খুব চেনা লাগছে আপনাকে, বেশ রাত হয়েছে আর জায়গাটা অতোটা নিরাপদ নয় , আপনি একা? সঙ্গে কেউ নেই? আচ্ছা এতো চেনা লাগছে কেন আপনাকে? আপনি কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন?

অনেক প্রশ্ন একসঙ্গে , কোনটার উত্তর আগে দেই! না সাথে কেউ নেই আমি একা, আপনাকেও বেশ চেনা লাগছে। আর হ্যাঁ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি আগে পড়েছি আর এখন পড়াই।

ওহ তাহলে এ চত্তরে আপনার ছাত্রছাত্রীদের অভাব নেই, আমি যদি ভুল না করে থাকি আপনি ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে ছিলেন রাইট?

হুম, আপনি তখন ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন, সাইন্স পড়েও কবিতা মঞ্চ নাটকের প্রতি আপনার বেশ অনুরাগ ছিলো…

মানে আপনি মানে তুমি মালতী, যাকে দেখা মাত্রই আমার বন্ধুরা হেরে কণ্ঠে কোরাস আবৃত্তি শুরু করতো “বেণী মাধব বেণী মাধব এতোদিনের পরে, সত্যি বলো সেসব কথা কেন মনে পড়ে? সেসব কথা বলছো তুমি তোমার প্রেমিকাকে? ”

আপনার বন্ধুদের সাথে কণ্ঠ না মেলালেও বেশ খুশি হতেন তাদের দুষ্টমিতে , আমার খুব মনে আছে।

আর কিছু মনে নেই মালতী? সেই যে শাহবাগ থেকে শিল্পকলায় হেঁটে যাওয়া, বেইলী রোডের নাটকের মঞ্চ , যত পরীক্ষা আর জরুরী পড়া থাকুক ঢাকা থিয়েটারের নাটক মানেই আমরা, তাড়াহুড়ো করে মৈত্রী হলে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরতে মধ্য রাত , মায়ের ঘরে ফোনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কারণ পৌঁছাতে পেরেছি কিনা এটি না জেনে তুমি ঘুমুতে যাবেনা।

কুড়ি বছর আগের কথা এতো মনে রাখতে নেই, আপনি ডাক্তারি পেশায় ভীনদেশে বেশ নাম করেছেন জেনেছি। আপনার বন্ধুরা ডাকছে মলয়দা, আপনি যেতে পারেন আমি উবার কল করেছি খুব কাছেই এসে গেছে গাড়ি।

কোন দিকে যাবে মালতী? আমরা একসঙ্গে যাই কথা বলতে বলতে, তোমার যদি আপত্তি না থাকে

অসুবিধা নেই কিন্তু আপনার অনেক রাত হয়ে যাবে ফিরতে আমি উত্তরা যাবো।

আমার এখন সন্ধ্যা ইউ এস, এ থেকে সময় পুরোই বিপরীত সারাদিন ঘুমাই সারারাত জেগে থাকি, তুমি নেমে গেলে এ গাড়িতেই ফিরবো। আচ্ছা তুমি কি এখনও নাটক আবৃত্তি এ-সব নিয়ে কাজ করছো?

হ্যাঁ এখন অভিনয় করার সময় পাইনা, মঞ্চের পেছনে কাজ করছি , সেট ডিজাইন, কস্টিউম এসব নিয়ে, আজ দলের নাটক ছিলো শেষ হতে দেরি হয়ে গেলো আর আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলো।

তুমি কিন্তু আমাকে আপনি বলতে না মালতী

সেতো কুড়ি বছর আগের কথা , দীর্ঘ সময় কতো কিছুইতো বদলে গেছে, আপনি তুমিতে কি এসে যায়!

একটা কবিতা শোনাবে মালতী?
সেই যে শহীদমিনারের সিড়িতে বসে যেটি শুনতাম

যুগলবন্দী?
ওটা তো একা করা যায়না আপনার মনে আছে?

“দেখা হলো যদি আমাদের দুর্দিনে আমি চুম্বনে চাইবোনা অমরতা, আমাদের প্রেম হোক বিষে জর্জর সর্প চুড়ায় আমরা তো বাঁধি বাসা”

“থাকুক এ চোখে দুর্ভিক্ষের দাহ করুক আবার আন্ধার আঁধিব্যাধি, আমাদের প্রেম না পেলো কবির ভাষা কাব্যচুড়ায় আমরা তো বাঁধি বাসা “

( কৃতজ্ঞতা কবি আবুল হাসান)